আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে পশু পালনে ব্যস্ত বাগেরহাটের খামারীরা। স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে রাতদিন খামারে কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পশু মোটাতাজা হয়েছে ভালই। জেলায় চাহিদার তুলনায় এবার পশুর পরিমানও বেশি। তারপরও হাসি নেই খামারীদের মুখে। করোনা পরিস্থিতিতে নিজের আদরের ধনের উপযুক্ত দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষীরা।
সরকারি হিসেবে আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে বাগেরহাট জেলায় ৪৩ হাজার ৮‘শ ২৫টি গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৩০ হাজার ৭‘শ ২৩, মহিষ ১ হাজার ১৩, ছাগল ১০ হাজার ৭‘শ ৮৬, ভেড়া ১ হাজার ১‘শ ৫৩ এবং ১৫০টি অন্যান্য পশু রয়েছে। তবে বাস্তবিক অর্থে কোরবানি উপলক্ষে প্রস্তুত পশুর পরিমান অর্ধলক্ষের কম নয়।
জেলার চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলায়ও যাবে বাগেরহাটের গরু। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এবারের কোরবানির ঈদের বাজার তেমন ভাল যাবেনা বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী ও খামারীরা। কোরবানির হাটে গবাদি পশুর দাম কম থাকলে খামারীদের সাথে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা মারাত্মক আর্থিক সংকটে পরবে। করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির আগ মুহুর্তের হাটের জন্য অপেক্ষা না করে এখন থেকেই গবাদি পশু বিক্রির পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান।
কোরবানি উপলক্ষে গবাদি পশু পালনকারীরা বলছেন, মূলত কোরবানি উপলক্ষেই গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন পশু মোটাতাজা করি।কোরবানির ৪-৫ মাস আগে থেকে কোরবানি পর্যন্ত কয়েক দফা পশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। সে অনুযায়ী কোরবানির সময় পশুর দামও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এবছর করোনা পরিস্থিতিতে পশু খাদ্য ও আনুসঙ্গিক সকলকিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে পশুর হাট তেমন বসছে না, আবার কিছু হাট বসলেও ক্রেতার দেখা নেই। এই পরিস্থিতিতে কোরবানির আগ মুহুর্তেও গবাদী পশুর তেমন দাম হবে না। এই পরিস্থিতি থাকলে এ বছর লোকসানে পরতে হবে আমাদের।বাগেরহাট সদর উপজেলার দেপাড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আজিজুল হাওলাদার বলেন, প্রতিবছর গাভী ও ষাড় মিলিয়ে ২০টির উপরে গরু পালন করি।
এবছর কোরবানিতে বিক্রির জন্য ৪টি বড় গরু রয়েছে। যার স্বাভাবিক মূল্য প্রায় ৭ লক্ষ টাকা। কিন্তু এখনও তেমন কোন ক্রেতা আসছেন না। দু একজন মৌসুমী ব্যবসায়ী আসলেও গরুর দাম অর্ধেক বলছে। আসলে এই গরু পালনের জন্য যে পরিমান টাকা খরচ করেছি, তাও উঠবে না।করোনা পরিস্থিতি এরকম থাকলে এবং গরুর দাম না বাড়লে এবার মাঠে মারা যাব। শুধু আজিজুল হাওলাদার নয় এরকম আশঙ্কা বাগেরহাটের বেশিরভাগ খামারীর।
দেপাড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আলমগীর মোল্লা বলেন, প্রতি বছর কোরবানিতে ১০ থেকে ২০ লক্ষ টাকার আইড়া (গরু) বিক্রি করি।কোরবানির দুই মাস আগে থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা খামার থেকে গরু নিয়ে যায়। কিন্তু এবছর খামারে ১৫টি গরু থাকলেও, তেমন কোন ক্রেতা নেই।ব্যবসায়ীরাও গরু নিতে সাহস পাচ্ছেন না। স্বাভাবিক দাম পেলে ৩০ লক্ষ টাকার উপরে বিক্রি হবে এবার।কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি হবে বলা যাচ্ছে না।
মৌসুমী ব্যবসায়ী মোঃ জাহাঙ্গীর মোল্লা বলেন, সারা বছরই আমরা গরু কেনা বেচা করে থাকি। কোরবানির আগের কিছুদিন সব থেকে বেশি ব্যবসা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে গত তিন মাস ধরে কোন হাট বসতে পারছে না।আর কোরবানির আগ মুহুর্তেও হাট বসার সম্ভাবনা নেই। এই অবস্থায় বাজার খুবই মন্দা থাকবে। কোন ভাবেই ভাল ব্যবসা আশা করা যায় না। তবে সরকারি ভাবে যদি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে গবাদি পশুর হাটের ব্যবস্থা করে তাহলে ক্রেতা, বিক্রেতা ও ব্যবসায়ী সবাই উপকৃত হবে।
কচুয়া উপজেলার গরু খামারী হানিফ শেখ বলেন, বাইরে তেমন কোন কাজ করতে পারি না। প্রতিবছর ২-৩টা গরু পালন করি। ৪-৫ লাখ টাকা বিক্রি করি। খরচ করে, যে লাভ হয়, এই দিয়ে সারা বছর চলি।করোনার কারণে এবারের অবস্থা তেমন ভাল না। কি হবে আল্লাহই ভাল জানেন।
বাগেরহাট জেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির বাজার কিছুটা মন্দা হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত বাজার ভাল আছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্থ্যাৎ যেসব জায়গায় বেশি পশু বিক্রি হয়, সেসব এলাকায় সামাজিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট বসানোর চিন্তা রয়েছে। অনলাইনেও পশু বিক্রির জন্য খামারীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।আমরাও চেষ্টা করছি যেসব খামারির বেশি গরু রয়েছে, তাদের সাথে ব্যবসায়ী ও বড় ক্রেতাদের সংযোগ করিয়ে দেওয়ার।পশুর খামারিদের সাথে আমরা সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছি। কোরবানি উপলক্ষে অতিরিক্ত লাভের জন্য খামারীরা তাদের পশুকে ইনজেকন বা অন্যকোন ক্ষতিকারক খাবার না খাওয়ায় সে জন্য আমাদের মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির আগ মুহুর্তের হাটের জন্য অপেক্ষা না করে এখন থেকেই গবাদি পশু বিক্রির জন্য পরামর্শ দিয়েছি চাষীদের। কিছু কিছু খামারী তাদের পশু বিক্রিও শুরু করেছে। তারা ভাল দামও পাচ্ছে। সব মিলিয়ে খামারিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টার কথা জানান তিনি।